বিমানবন্দরের ফোটোভোলটাইক, ছাদে ইনস্টল করা হয়নি?
2024-12-04
বিমানবন্দরের ফটোভোলটাইকগুলি, ছাদে স্থাপন করা হয়নি?
টেকসইতা, উদ্ভাবন এবং বিমান চলাচলের নিরাপত্তার একটি সাহসী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে জার্মানির নুরেমবার্গ বিমানবন্দর একটি অত্যাধুনিক ফটোভোলটাইক (PV) পরিধি বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করেছে, যা দেশের অন্যতম অনন্য সৌর শক্তি প্রকল্প হতে চলেছে। গত শুক্রবার এক প্রতীকী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দূরদর্শী প্রকল্পের সূচনা হয়, যার লক্ষ্য হল পরিচ্ছন্ন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি দিয়ে বিমানবন্দরকে চালিত করা।
![]()
✈️ বেড়াগুলিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রূপান্তর করা
১.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৬০ মিটার প্রস্থ জুড়ে বিস্তৃত PV বেড়া সিস্টেমে প্রায় ২৩,০০০ সৌর প্যানেল থাকবে যা পূর্ব-পশ্চিম দিকে স্থাপন করা হবে। এই নকশাটি দিনের বেলা বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ায় এবং অবতরণের সময় পাইলটদের জন্য ঝলকানির ঝুঁকি কমিয়ে দেয়—যা শক্তি, নান্দনিকতা এবং নিরাপত্তার জন্য একটি দারুণ বিষয়।
সিস্টেমটিতে সর্বোচ্চ ১৩.৪ মেগাওয়াট ক্ষমতা থাকবে, যা বার্ষিক আনুমানিক ১৩.৪ GWh বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে, যার পুরোটাই বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ পাওয়ার গ্রিডে সরাসরি সরবরাহ করা হবে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সংহতকরণের এই উদ্ভাবনী পদ্ধতি টেকসই বিমানবন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা প্রমাণ করে যে কীভাবে পরিবহন অবকাঠামো নিরাপত্তা বা কার্যকারিতা আপস না করে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করতে পারে।
প্রকল্পের কৌশলগত পূর্ব-পশ্চিম প্যানেল বিন্যাস নকশার একটি বিশেষ উদ্ভাবনী দিক। ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণমুখী সৌর স্থাপনার বিপরীতে, এই কনফিগারেশনটি দিনের বেলা আরও ধারাবাহিক শক্তি উৎপাদন করতে দেয়, যেখানে দুপুরের পরিবর্তে সকাল এবং বিকেলে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়। এই উৎপাদন প্রোফাইলটি বিমানবন্দরের পরিচালনগত শক্তির চাহিদার সাথে আরও ভালোভাবে সঙ্গতিপূর্ণ, সেইসাথে বিমান চলাচলের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখে।
এর চিত্তাকর্ষক উৎপাদন ক্ষমতা ছাড়াও, সৌর বেড়া একাধিক পরিপূরক কাজ করে। এটি প্রয়োজনীয় পরিধি নিরাপত্তা বজায় রাখে এবং একই সাথে প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের জন্য শব্দ কমানোর বাধা হিসেবে কাজ করে। দ্বৈত-উদ্দেশ্যপূর্ণ নকশাটি উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরে যে কীভাবে অবকাঠামো একযোগে একাধিক উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে, যা চিন্তাশীল প্রকৌশলের মাধ্যমে পরিবেশগত উদ্বেগ এবং সম্প্রদায়ের সম্পর্ক উভয়কেই সমাধান করে।
প্রকল্পটি নুরেমবার্গ বিমানবন্দরের বৃহত্তর টেকসই কৌশল-এর একটি অংশ, যার মধ্যে কার্বন হ্রাস এবং শক্তি স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সাইটে পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে, বিমানবন্দরটি কেবল তার পরিবেশগত পদচিহ্ন হ্রাস করে না বরং বাহ্যিক বিদ্যুতের বিভ্রাটের বিরুদ্ধে তার অপারেশনাল স্থিতিশীলতাও বাড়ায়। এই পদ্ধতিটি দেখায় যে কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা বজায় রেখে আরও টেকসই কার্যক্রমের দিকে পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
সৌর বেড়া স্থাপনের জন্য শক্তি প্রকৌশলী, বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল। দলটি বিমান চলাচল বা বিমান ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কোনও হস্তক্ষেপ করবে না তা নিশ্চিত করার জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঝলক বিশ্লেষণ এবং ফ্লাইট পাথ সিমুলেশন পরিচালনা করেছে। এই বহু-বিষয়ক পদ্ধতি সংবেদনশীল পরিবেশের জন্য উদ্ভাবনী পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সমাধান তৈরি করতে ক্রস-সেক্টর সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে।
নুরেমবার্গ বিমানবন্দর প্রকল্পটি বিশ্বজুড়ে অন্যান্য বিমানবন্দর এবং পরিবহন কেন্দ্রগুলির জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করে, যা দেখায় কিভাবে অব্যবহৃত স্থানগুলিকে মূল্যবান শক্তি সম্পদে রূপান্তরিত করা যায়। যেহেতু বিমানবন্দরগুলি সাধারণত বিশাল এলাকা দখল করে এবং উল্লেখযোগ্য পরিধি বেড়া থাকে, তাই এই ধারণাটি বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচল শিল্পে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রয়োগ করার সম্ভাবনা তৈরি করে। প্রকল্পের সাফল্য বিশ্বজুড়ে পরিবহন সুবিধাগুলিতে অনুরূপ উদ্যোগকে অনুপ্রাণিত করতে পারে, যা বিমান চলাচল খাতের বৃহত্তর টেকসই লক্ষ্যগুলিতে অবদান রাখবে।
নির্মাণ কাজ এখন শুরু হওয়ার সাথে সাথে, বিমানবন্দরটি আশা করছে যে সৌর বেড়া আগামী এক বছরের মধ্যে চালু হবে, যা বিমান চলাচল অবকাঠামোর জন্য সমন্বিত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সমাধানের একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। প্রকল্পটি জার্মান প্রকৌশল উদ্ভাবন এবং পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়নে টেকসই অনুশীলনের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের প্রমাণস্বরূপ, যা বিশ্বজুড়ে পরিবেশ-সচেতন বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য একটি নতুন মান স্থাপন করছে।

